১৫ টি জেলা. ৮ -১০ টি পর্যটক অঞ্চল, ১ টি দেশ (ভারত), ৩ টি অঙ্গরাজ্য (আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়) ভ্রমণ করতে পেরেছি এবং এখন সুস্থ আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
এই ভ্রমণ যাত্রায় আমি যা দেখেছি, যা অনুভব করেছি, সেটাই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। আসুন, বিস্তারিতভাবে জানি আমার এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা:
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন:
বছরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল অনেক, তবে নানা ব্যস্ততার কারণে সবগুলো পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি। তবে, এতকিছুর মাঝেও কিছু নির্দিষ্ট স্থান ভ্রমণ করতে পেরেছি এবং এই অভিজ্ঞতাগুলো সত্যিই অতুলনীয়।
বাংলাদেশে ভ্রমণ:২০২৪
বাংলাদেশের অনেক প্রান্তে ভ্রমণ করার সুযোগ পেয়েছি, যেখান থেকে আমি গভীরভাবে অনুভব করেছি দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আমি মানিকগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, এবং টাঙ্গাইল বাদে যশোর, সাতক্ষীরা, বরগুনা, খুলনা, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহ মোট ১৫টি জেলা ভ্রমণ করেছি। এর মধ্যে সিলেট এবং সাতক্ষীরা দুইবার ভ্রমণ করা হয়েছে, যা ছিল অত্যন্ত স্মরণীয়।
যশোর ও সুন্দরবন:
বছরের শুরুতে আমার প্রথম যাত্রা শুরু হয় যশোর থেকে। এখানে অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান গদখালী ফুলের বাগান, যা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। তারপরে সুন্দরবন থাকা হয় ৩ দিন।
কক্সবাজার ভ্রমণ:
জানুয়ারির শেষের দিকে আমরা কক্সবাজার গিয়েছিলাম। কক্সবাজারের প্রায় সকল জনপ্রিয় পর্যটক অঞ্চল যেমন মেরিন ড্রাইভ রোড, কলাতলী বিচ, ইনানী বিচ, লাবনী বিচ, হিমছড়ি, মহেশখালী ইত্যাদি ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল এখানে থাকা ছিল ৩ দিন।
সাতক্ষীরা ভ্রমণ:
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, আমি আবার সাতক্ষীরা ভ্রমণ করি। সাতক্ষীরার গ্রামাঞ্চল এবং শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছি। এখানকার লোকজীবন, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতি আমাকে চমকে দেয়।
সিলেট ভ্রমণ:
সিলেটের রাতারগুল বন, ভোলাগঞ্জ, এবং সিলেটের চা বাগানগুলোর সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। সিলেট ভ্রমণ শেষে, আমি চলে আসি শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, দার্জিলিং টিলা এভাবে আরও অনেক টুরিস্ট স্পট ঘুরে দেখার সুযোগ হয়। শ্রীমঙ্গলে ছিলাম দুই দিন, যদিও তখন আমি কিছুটা অসুস্থ ছিলাম, তবে পরিবেশ এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য আমাকে পুনরায় শক্তি জোগায়।
ভারত ভ্রমণ:
এই বছর আমার একটি আরেকটি বিশেষ ভ্রমণ ছিল ভারত। যদিও আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল একা ভ্রমণ করা, তবে সফর চলাকালে আমি দুই ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হই এবং একসঙ্গে আসাম, ত্রিপুরা, এবং মেঘালয় অঙ্গরাজ্যের বেশ কিছু জনপ্রিয় পর্যটক স্থান ভ্রমণ করি। আমি মোট ৮ দিন ছিলাম ভারত ভ্রমণে।
ভারতীয় টুরিস্ট স্পট:
ভারতের এই ভ্রমণ ছিল অত্যন্ত আনন্দদায়ক এবং এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমি যেসব শহর ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেছি তা নিম্নরূপ:
শহর:
আগরতলা (ত্রিপুরা), গুয়াহাটি (আসাম), শিলং (মেঘালয়), চেরাপুঞ্জি (মেঘালয়)
দর্শনীয় স্থান:
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি
- ব্যাম্বু ট্রেক
- সেভেন সিস্টার ফলস
- মকডক ভিউ পয়েন্ট
- মাওসমাই কেভ
- খরম্মা স্টোন
- নোহকালিকাই ফলস
- ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ
- রেইনবো ফলস
- মাউলিনং গ্রাম (এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম)
- ডাউকি নদী (এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার নদী
এছাড়া আরও অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ হয়।
বিশেষ অভিজ্ঞতা:
এর মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় ছিল ব্যাম্বু ট্রেক, যা আমার জীবনের একটি ভয়ঙ্কর কিন্তু অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল। এই ট্রেকের রোমাঞ্চ ও চ্যালেঞ্জ একেবারে আমাকে আলাদা অনুভূতি প্রদান করেছিল। এছাড়া, আগরতলা থেকে গোহাটি পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণও ছিল অত্যন্ত দারুণ একটি অভিজ্ঞতা। দীর্ঘ এই যাত্রায় ভারতের দৃশ্যাবলী এবং পথে চলতে থাকা জীবনের গল্পগুলো আমাকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন দেখতে শেখায়।
উপসংহার: ২০২৪ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা
এ বছর আমার ভ্রমণ ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার সমাহার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুরু করে ভারতের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলো, প্রতিটি জায়গার সংস্কৃতি, প্রকৃতি, এবং মানুষের সঙ্গে পরিচয় আমাকে নতুন কিছু শিখিয়েছে। জীবনের এই স্মৃতিগুলো আমি চিরকাল মনে রাখব। সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, আমি সুস্থ আছি এবং এই ধরনের অসাধারণ অভিজ্ঞতা লাভ করতে পেরেছি।
এই বছর আমি নিজের ভ্রমণ যাত্রার পরিসমাপ্তি টানলাম। আশা করি, আপনিও নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাগুলি শেয়ার করবেন এবং ভবিষ্যতে আরও নতুন জায়গা ও অভিজ্ঞতা লাভ করবেন।
সবগুলো ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বিস্তারিত ভাবে আমার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আকারে দেওয়া আছে : Travel With Shahidul